রথিকে এই কয়দিন কেন জানি খুব মনমরা দেখায়। আবার মাঝে মাঝে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করলেও মুখে সেই আগের মত উচ্ছলতা নেই। এই জিনিসটা নিয়ে অনেক্ষণ চিন্তা করছে জিসান। কেও ব্যপারটি ধরতে পারছেনা। জিসান আন্টির কাছে শুনেছে পাচ দিন আগে আরও অবস্থা খারাপ ছিল, সারাদিন মনমরা হয়ে থাকত। কেওকে কিছু বলছিল না। চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পড়ত। জিসান এ নিয়ে খুব চিন্তা করছে।
জিসান তার অগোছালো খাটের উপর শুয়ে দেয়ালে টাঙ্গানো ঘরির দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবছিল। হঠাৎ দরজায় নক্ করার শব্দ পেল।
" ভাইয়া আসতে পারি। "
জিসান গলা শুনেই বুঝতে পারল রথি এসেছে। জিসান দরজা খুলে দিল। ঘরে ঢুকে রথি জিসানকে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া আসতে পারি।
এটা আবার জজ্ঞেস করতে হবে নাকি। এসে বস।
রথি ঘরে ঢুকে জিসানের পড়ার টেবিলের সাথে থাকা চেয়ার খাটের কাছে টেনে বসে বলল,
ভাইয়া এখনো নিজেকে না গুছালে কেমন করে হবে। তোমার টেবিল দেখ যত্রতত্র বইখাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছ। খাটের অবস্থা নাইবা বল্লাম। এর মধ্যে শুয়ে থাকতে পার কেমন করে? এমন করলে কেমন করে হব বল। এখনও কি নিজের দায়িত্ব নিবেনা।
জিসান একটু রেগে বল্ল,
ওই ছড়ি, নিজের চর্কায় তেল দেও নিজের ঘরের অবস্থা দেখেছ। আমাকে আবার বলতে এসেছ।
না ভাইয়া, আমি তো তাও আম্মুর সাহায্য করি আপনি খালাম্মার কোন কাজেই আসেননা।
আরে আমি এসব করলে আমার বউ কি করবে।
ভাইয়া বউ যদি আমার মত হয়, তাহলে তো হয়েছে। এই বলে সাথে সাথে সে হেসে দিল। ছোট বাচ্চাদের মত হাসছে।
জিসান কিছুক্ষনের জন্য থ হয়ে গেল। কি বলবে বুঝে পাচ্ছিল না। জিসানকে চুপ থাকতে দেখে রথি জিজ্ঞেস করল,
কি হল ভাইয়া কথা বলছনা কেন?
না কিছূনা। ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি।
হাসি মাখা মুখ নিয়ে রথি বলে, কি ভাবছ?
আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার হাসিটা কৃত্রিম। তুমি জোর করে হাসছ।
এমনটা কেন মনে হচ্ছে?
খালাম্মা বল্ল তুমি নাকি কয়েকদিন ধরে খুব আপসেট।
দেখ ভাইয়া আমাকে এমন কোন প্রশ্ন করবিনা যাতে মেজাজ বিগরে যায়।
আশ্চর্যতো এখানে মেজাজ বিগড়ানোর কি আছে। কিছু কি হয়েছে? কারও কাছ থেকে দু:খ পেয়েছ?
ভাইয়া আমার একটু মনটা খারাপ ছিল এখনোও আছে মনে হয়। যতক্ষণ না আমি নিজে থেকে কিছু বলব ততক্ষণ তুমি আমাকে এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবিনা। আমি আরেকটু ভাবছি বিষয়টা তোমাকে বলে লাভ হবে কিনা।
না থাক বলা লাগবেনা। আমি অনেক কিছুই বুঝিনা। বুঝই তো আমি একটু বোকা। আমাকে বলে লাভ হবেনা।
আচ্ছা ভাইয়া তুমি.... ... ...
বরং আমরা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলি। এবারের কক্স বাজারের টুরে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। প্রিতমকে তো চিন। তার গার্লফ্রেন্ড দেখি অন্যের হাত ধরে পানিতে নামছে। তারপর যে দৃশ্য ইস দেখলে ঘেণ্ণা করে। পরের তা আর বল্লাম না।
আমি বুঝে নিলাম ভাইয়া এরপরে..
আর বলোনা.. রুবিনা তো হাতেনাতে ধরা। প্রিতম কি করবে বুঝে পাচ্ছে না, তার মাথা কাজ করছেনা। সেই মুহুর্তে আমরা মানা করা সত্বেও সে দৌড়ে তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, এই ছেলেটা কে? আমরা পিছনে পিছনে ছুটছি? রুবিনা কি বলবে বুঝে পাচ্ছিল না। আমরা পৌছানোর আগে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিল।
ঠিকই করেছে।
আহা বলনা কি যে পরিস্হিতি সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ জড় হওয়া শুরু করল। ওই ছেলেটিও রুবিনাকে জিজ্ঞাসা করছে প্রিতমের ব্যপারে। রুবিনা কাদছে কোন উত্তর দিচ্ছেনা। প্রিতম বল্ল, এর গলায় যে ডায়ামন্ডের হারটা সেটা আমার দেওয়া। ছেলেটা প্রিতমকে বলে, ইম্পসিবল এত টাকার গিফ্ট আপনি দিতে পারেননা, ওর মামা দিয়েছে। আপনি যে মেয়ের গায়ে হাত তুলেছেন এটার পরিণতি কি হতে পারে আপনি জানেন। প্রিতম বলে, ওর মামা- হা ওর একটাই বেকার মামা কি দিবে। ছেলটো বলে, আপনি কারও ব্যপারে এমন করে বলতে পারেননা। প্রিতম বলে, আমিন মামা ওরে আগে রূপার গলারটা দিক.. ডায়ডমন্ড অনেক দূরের কথা। এবার ছেলেটা বুঝল রুবিনার মামার নাম এই ছেলেটার জানার কথা না। ছেলেটা এবার রুবিনাকে বল্ল, shame on you.. তুমি আমার সাথে নাইট পাস করতে চাও। তুমি আবার.... ছিহ। বলতে বলতে থেমে গেল। তুমি একটা নোংরা মেয়ে।
অনেক্ষন একটানা শুনার পর জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা অনেক ভদ্র তাই না।
হুম।
এ ধরণের মেয়েদের উচিত শিক্ষা হওয়া উচিৎ। এরাই ভালো ভালো ছেলেদেরকে ভাঙ্গিয়ে খায়।
হুম। প্রিতমেরও তো মাথা খারাপ.. ৪০হাজার টাকার অরনামেস্টস দিতে বলে কে। ওরও বোঝা উচিৎ।
হুম ভাইয়া, প্রিতম ভাই এত টাকা কই থেকে পেল?
সব গ্রামীনের আইপিওর কল্যাণ।
আসলেই যা হয়েছে ভালই হয়েছে। আরও দেরি হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত।
হুম ভালই হয়েছে। আল্লাহ যা করে ভালর জন্য করে।
আচ্ছা ভাইয়া যারা সত্যিকারের ভালবাসে তারা কেন তাদের সত্যিকার ভালবাসা পায় না।
আমি জানিনা। আমি আমেরিকান, বুঝিনা ভালবাসার ভাষা।
না ভাইয়া, তুমি মিথ্যে বলছ, যে আমেরিকানের মুখে এত সুন্দর বাংলা বলে সে অবশ্যই ভালবাসার মানে বুঝে। বাংলা হল মধুর ভাষা। এই ভাষায় শুধু সুন্দর করে এই বাক্যটি বলা যায়। আমি তোমায় ভালবাসি। বলতে বলতে রথি চোখের কোণে অশ্রু ফোটা।
রথি বলার সময় জিসান ভাবছিল, তুমি জাননা, আমি কেন পাচটা মাস বাংলাদেশে আছি। তুমি বুঝনা কেন আমার বাংলা এত শুদ্ধ? আমি বলতে পারছিনা, আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু রথির চোখে পানি দেখে আবার বল্ল,
এই রথি আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবনা। অনেক প্রশ্ন মনে আছে কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে পারছিনা।
আচ্ছা ভাইয়া তুমি সবসময় আমার কথা শুন কেন?
আমার কাছে মনে হয় এর উত্তর নেই।
না ভাইয়া আমি দেখেছি তুমি সবসময় হিন্দি ছবির মত, নায়ক যেমন সবসময়ই নায়িকার কথায় উঠবস করে তুমিও তাই কর। ব্যপারটা কি বল তো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিসান বলে হিন্দি ছবি তো জীবন থেকে আসে আবার ছবির সাথে জীবন মিলিয়ে লাভ নাই।
তার মানে... থাক আর সামনে না বলাই ভাল।
হুম থাক.. না বল। বেশি পাকনারা খুব তারাতারি বুঝে যায়।
থাক ভাইয়া বুঝেছি, তোমার মন তোমার কাছে নাই।
অবাক হয়ে গেল জিসান। কি বলবে বুঝে পাচ্ছেনা।
চলবে....