শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

নূপুরের চোখের জল আর আরিফের ভাগ্য ২


২. আরিফের জীবনের ওলটপালট

এখন আরিফ তিনটা টিউসুনি করে। নাটাশা তাকে ফ্লেক্সি পাঠাত, আরিফের কাছে ভাল লাগেনা। নাটাশার সাথ কথা বলে জানতে পারল, নাটাশা অনেক বড় লোকের মেয়ে। নাটাশার মা নেই। ওর যত্ন করার জন্য অনেক মানুষ আছে। এক খালা লন্ডন থাকে। নাটাশা তাকে পছন্দ করে কিন্তু পড়শোনার জন্য খালাকে লন্ডন যেতে হয়। বাবা তেমন সময় দিতে পারে না।  আরিফের সাথে কথা বলতে তার ভাল লাগে। আরিফকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা। মাদক কেন্দ্রময় থেকে সুস্থ্ হয়ে ফিরে এসেছে। নাফিসা যখন যা চায় তাই পায়। নিজের ইচ্ছা মত চলে।
নটরডেমের পড়াশোনার চাপ। প্রাইভেট পড়তে যাওয়া, প্রাইভেট পড়ানোর পর হোস্সেলে ফিরতে ফিরতে ১১টা বেজে যায়। তারপর আবার রাত জেগে নাটাশার সাথে কথা বলা আর একসাখে পড়াশোনা করা, ২-৩ঘন্টা ঘুমানো। এই ছিল আরিফের পতিদিনের পুঞ্জিকা ছিল।

প্রথম ঈদ। নাটাশার কথা ভুলেই গেছে। এবার তার নূপুরের কথা মনে পড়ল। নূপুরের জন্যই তারাতারি বাড়ি ফিরা। নাটাশার সাথে কথা বলবেনা, আর বাসায় এর জন্য সমস্যা হবে তাই সেলেফান বন্ধ রাখে। বাড়ী ফিরে মার সেকি কন্না,-আমার নাদুস নুদুস ছেলের একি অবস্থা।
বাড়ী ফিরে নূপুরের জন্য অপেক্ষা করল। আরিফ মনে করেছিল, ওর আসার কথা শুনে নূপুর ঠিকই দেখা করতে আসবে। কিন্তু না আসায় আরিফ তার মাকে ওর ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর পায় না। পাড়ার মানুষ থেকে জানতে পারল, নূপুরের বাবা বিয়ে ঠিক করেছিল। নূপুর বিয়ে করবেনা তাই বাসা থেকে পালিয়েছিল। ধরা পড়ার পরে তার বাবা তাকে ছোট বোনের বাড়ি টাঙ্গাইল পাঠিয়ে দিয়েছে সেখানই সে এখন থাকে, পড়াশোনা করে। বাবা মেয়ের মুখ দেখবে না নূপুরের মা গেছে টাঙ্গাইলে। এই কথা  শুনে আরিফের মন খারাপ হয়ে গেছে। তার ঈদ আধা হয়ে গেছে।

ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরে দেখে মোবাইল হাঙ হয়ে আছে। নাটাশার অসংখ্য এস.এম.এস আর মিসকল মোবাইলের এই অবস্থা। কোন মেসেজ.. মিস কল সংখ্যা দেখতে পারেনাই। দোকানে যেয়ে মোবাইল ঠিক করালো। তারপর রাতে নাটাশাকে ফোন দেয়ার পর জানতে পারল, নাটাশা এই কয়দিনে কোন ওষুধ খায়নি বরং ড্রাগ নিয়েছে। কানতে কানতে এই সব কথা নাতাশা বলে। আরিফ সরি বলে আর নাটাশা যাই চাবে তাই করবে এমন কথা দেয়। নাটাশা পরের দিন দেখা করতে চায়। সারাদিন ওর সাথে সময় কাটাবে। আরিফ দেখা করতে চাচ্ছিলনা- কথনই না। কিন্তু নিজের অনিচ্ছায় তাকে দেখা করতে হল। 


চলবে......  

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

নূপুরের চোখের জল আর আরিফের ভাগ্য


১. সূচনা
নারায়ানগঞ্জে যৌথ পরিবার দুই ভাই একসাথে থাকত। ছোট ভাই কাউসার আহমেদ এর দুই ছেলে মেয়ে আর বড় ভাই আহসান হাবিব এর তিন ছেলে মেয়ে।কাউসার আহমেদের বড় ছেলে আরিফ  আর আহসান হাবিবের মেঝ মেয়ে নূপুর পিঠে পিঠে মানুষ হয়েছে। নূপুর ছিল ঠান্ডা প্রকৃতির আর আরিফ ছিল দুষ্টু। সারা দিন এই দুজন ঘরটা গরম করে রাখত। নূপুরের নালিশ এর জালায় নূপুরের মা আর আরিফের মার মধ্যে প্রায় ঝগড়া লাগত। এমনি দুজনের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি ভাল। বাবারা এসব নিয়ে মাথা ঘামাতো না। দুজনের মা না পেরে দুজনকেই ঘরে আটকিয়ে রাখত দরজা বন্ধ করে। তখন আরিফ তার মাকে বলত-
মা আমি আর নুপূরকে জ্বালাতন করবনা। ওইদিকে নূপুর তার মাকে বলত-
মা আমি আর তোমাকে নালিশ করবনা।
দুজনের কান্নাকাটি দেখে মায়ের মায়া লাগে তাই আবার দুজনকে ছেড়ে দেয়। সবসময় এমনই করত দুজনই।


আস্তে আস্তে তারা বড় হতে লাগল । বাবারা একই সাথে ব্যবসা করত। কিন্তু যখন আরিফ নূপুর ৭ম শ্রেণীতে পড়ে তখন ব্যবসার মধ্যে ভুল বোঝাবোঝির জন্য ফাটল ধরে। তখন থেকে দুই ভাই আলাদা হয়ে যায়। ব্যবসা আলাদা হয় বাড়ীর মাঝে পড়ে ইটের দেয়াল। তবে দেয়ালের মাঝে একটা ছোটখাট একটা টিনের দরজা আছে। আগে বাড়িতে একটাই ঢোকার গেট ছিল এখন দুটো গেট।  আলাদা হয়ে যায় দুই ভাই কিন্তু তাদের বউরা এবং আরিফ আর নূপুর আলাদা হয়নি। দুই ভাই সামনাসামনি দেখা হলে কেও কারো সাথে কথা কলে না।  

দশম শ্রেণীতে যখন আরিফ উঠল তখন আরিফ বুঝতে পারল তার মধ্যে একটা পরিবর্তন হচ্ছে। সে এখন সারাদিন নূপুরকে নিয়ে চিন্তা করে। নূপুরকে সে আগের মত জ্বালায় না। নূপুরের মধ্যে এই পরিবর্তন হয়নি আরিফ খেয়াল করে। মাট্রিক পরিক্ষার পর বুঝতে পারল এটা ভালবাসা ছাড়া কিছু না। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি কারণ আরিফ নুপূরের থেকে আট মাসের ছোট্ এই দিকে আরিফের বাবা ঠিক করেছে আরিফকে ঢাকায় পাঠাবে। আরিফ ঢাকায় চলে আসল। আসার সময় নূপুর কেদেছিল আর বলেছিল চিঠি লিখিস। তখন আরিফের চোখও ভিজে আসে।

আরিফকে তার বাবা মোবিইল কিনে দিয়েছিল। কিন্তু নুপূরের কাছে কোন মোবাইল নাই। ঢাকায় এসে আরিফ নটোরডেম এ চান্স পায়। এবং সাথে চান্স পায় আরিফের দুশমন রানাও পায়, ওরই সথে পড়ত। দুজনকে দুজনের বাবার জন্য একই হোস্টেলে থাকতে হত। ঢাকায় এসে নুপূরকে  পর পর তিন মাস টিনটা চিঠি লিখেছিল। তার উত্তর্‌ ও পেয়েছিল কিন্তু এর পর থেকে পরবর্তি তিনটা চিঠির উত্তর পায়না। অনেক চিন্তিত ছিল। কিন্তু কেওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলনা কি হয়েছে। এদিকে হোস্টেলের সবারই ফোনফ্রেন্ড আছে। কারো গার্লফ্রেন্ড কারো টাইমপাস ইত্যাদি ইত্যাদি। আরিফের এক বন্ধু এক মেয়ে নাটাসার নাম্বর দেয়। তার বন্ধুও জানেনা নাটাসা কেমন? আন্দাজের উপর আরিফকে বলেছে মেয়েটা ভাল। আরিফ কথা বলা শুরু করেছে নাটাসার সাথে। আর এই নাতাসাই আরিফকে নূপুর থেকে দূরে সরিয়ে নিল। আস্তে আস্তে নূপুরের প্রতি ঝোক কমে । একমাসে তিনশত টাকার হিসেব দিতে পারিনি তাই বাবার কাছে অনেক বকা খেতে হল নাটাশাকে ফোন করার কারণে।  


চলবে....

সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০১০

কিছু দিন আগে -২

রথি বলা শুরু করল আচ্ছা ভাইয়া যে মানুষগুলো সত্যিকারে ভালবাসে তারা কেন তাদের ভালবাসা পায়না?
আমি তো জানিনা। (মনের মধ্যে গভীর ব্যথা লুকিয়ে কথাটি বল্ল।)
আচ্ছা তুমি কি সত্যি বুঝনা। নাকি অভিনয় কর। আচ্ছা ভাইয়া প্রতিটি মানুষ কি অভিনয় করে। এই যে মানুষ যে মানুষকে বলে, ভালবাসি। তাকে ছাড়া বাচতে পারব না। তুমি  আমার ঘুম তোমায় ছাড়া আমি বাচবনা। তারপপর ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কোন রকম ফল্ট পেলে না আমি তোমাকে কথননো ভালবাসিনি। এই যেমন প্রিতম ভাইয়া এক ধাক্কায় রুবিনাকে পথে ছেড়ে দিল দুজনই। এটা তো অনেক বড় কারণ ছিল। এর চেয়েও ছোট ছোট কারণেও প্রেমিক প্রমিকাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু রুবিনা  অনেক কূল খুজতে যেয়ে কোন কূলই খুজে পেল না।......

আমি জানিনা মেয়েটার মধ্যে হয়তোবা কোন প্রব্লেম আছে। কিন্তু আমার বন্ধুর মাথায় ছিট আছে। মেয়েটার সাথে এখনো তার রিলেশন আছে। এই দেশের ছেলে মেয়েরা পাগল্ কিন্তু আমেরিকায় মানুষদের এত সময় নাই তারা কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত।
রথি অবাক হয়ে গেছিল। তার কান বিশ্বাস করতে পারছিল না। হচকচিয়ে জিজ্ঞেস করল এমন মেয়ের সাথে প্রেম। বল কি। মেয়েটা তো চরিত্রহীন।
হুম আমিও বুঝিনা আমেরিকা হলে একটা কথা ছিল্। এটা আমেরিকান কুয়ালিটি।  এখানকার মানুষরা যে এমন...  ভাবতে ভাল লাগে। ডিজিটাল হয়েছে বাংলাদেশ।
না ভাইয়া আবার ব্রেকআপ হবে। এমনটি হয়না। এখানে কোন ব্যপার আছে।
হতে পারে। প্রিতম বলেছে তার পিছনে এত টাকা নষ্ট করেছে কিছু তো উঠিয়ে আনতে হবে।

ছি: ভাইয়া তাহলে তো সর্বনাশ হয়েছে। তুমি কোন দেশের এলিয়েন্ বুঝনা কি হচ্ছে। আমোরকান এমন বোকা হয় প্রথমবার দেখছি।
না আমি এভাবে ভেবে দেখিনি। সবসময় পসিটিভ ভাবি তো তাই।
ভাইয়া এ পৃথিবীতে সব কিছু পসিটিভ নেয়া যায়না। কোন কিছু পসিটিভ নেয়া যায় না।
এখন কি করব।
কি আর করবে তোমার কিছুই করার নাই তুমি নিজেই এদেশে মেহমান। এরা সব তোমার ছোটবেলার বন্ধু বাচ্ছ ভাইয়া বাচ্ছ তা না হলে আজও তুমিও এদের মধ্যে হতে।
হলে হতাম তো কি হত। যেমন দেশ তেমন মানুষ।
দেশের দোষ দিবা না।
না না তুমি প্রতিদিন যা চাচ্ছ তাই পাচ্ছ। বন্ধুদের সাথে মন খুলে টাকা খরচ করছ। পেজিরোতে চড়। মানুষের কাছে গি দেখেছো। তোমার মুখে এ সাজায় না।

তা অবশ্য ঠিক। আমি বুঝিনি কখনো কিন্তু আমি কখনো প্রিতম ভাইয়ার মত তোমাকে কল্পনা করবনা কারণ.... ...
কারণ কি?
তুমি কিচ্ছু বুঝনা।
কি বুঝিনা।
একটা মেয়ের চোখের ভাষা, মনের  অবস্থা।
তুমি মনে হয় খুব বুঝ মনে হয়।
আমি বুঝি সব বুঝি তোমার কথা তুমি মুখে আটকিয়ে রাখ আ মনকে কষ্ট দাও।
আমি কিছু বুঝছিনা।
ভাইয়া যতই আধুনিক হইনা কেন আমি কেন বাঙ্গালি একটা মেয়ে। হতে পারে আমি অগোছালো এবং টাকা পয়সার প্রতি আমার কোন মায়া নেই। কিন্তু....

আমি বুঝেছি। তুমি কি কেওকে ভালবাস?
এমন একটা প্রশ্নের জন্য রথি প্রস্তুত ছিলনা। সে অনেক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভেবে বল্ল, ভাইয়া এই কথার উত্তর আমি দিবনা।

না দিলে তো আমি আমার  মনের কথা তোমার মনের সামনে উপস্থাপন করতে পারছিনা।
ঠিক এই সময় জিসানের মা ঘরে ঢুকে বল্ল মা শিলা(রথির মা) তোমাকে খুজছে।
রথি, জিসানকে  বল্ল, ভাইয়া আজ যাই তাহলে পরে কথা হবে। 
আমার কথার উত্তরটা পারলে দিও।


রথি নিজের ঘরে চলে গেল। একই বিল্ডিং এর তিন তালায় রথি থাকে। বিল্ডিং টা রথিদের। চারতালায় একটা ফ্লাট দিয়েছে রথির বাবা, জিসান আর তার মাকে। তিন মাস থাকার কথা ছিল এখন প্রায় ছয় মাস হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকায় থাকে। চলে যাওয়ার সময় হয়ে আসছে। জিসানের মা বুঝতে পেরেছে। তিন মাস ছয় মাস তো আর এমনি এমনি হয়না । তাদের আরো আগে বোঝা উচিৎ ছিল।  জিসানের মা তার ছোট বোন শিলাকে  ব্যপারটা বলেছে। রথির বাবার কোন আপত্তি নেই নিজেদের মধ্যে আত্মীয় করতে। তাদের এ বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল।




রথি নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে খাটে শুয়ে  কাঁদছে। তারপর মনে মনে বলতে থাকে, ভাইয়া তুমি জাননা আমি কেন আমার চোখে জল। তুমি আসার কিছুদিন আগেও সে আমার হয়েছিল। আমার মন জয় করেছিল।  আমি তো মরেই গেছিলাম তুমিই আমাকে আবার জীবিত করেছ। তুমি জাননা জনিকে আমি কত ভালবাসতাম। কিন্তু সে আমার কথা রাখেনি। আমার সাথে প্রতারনা করছে।  সে আমায় ছেড়ে গেল। মাত্র ২১দিন । সেই একুশ দিন আমি ভুলতে পারতামনা যদি না তুমি আসতে। আমি কখনোও তোমাকে বলতে পারব না জনি আমায় ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আমি তার কখনো খারাপ চাইনি সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল কেন? আমি তো তা চাইনি। ভাইয়া জাননা কত অভিনয় করেছি। বাসায় কেওকে জানাবোনা বলে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছি। আমার আব্বুর হাসিখুশি মেয়ে হয়ে থাকতাম। প্রথমে মনে করে ছিলাম, তুমি আমার কাছে থাকা মানে জনি আমার কাছে থাকা।  কিন্তু না জনি আর তোমার মধ্যে কোন মিল নাই। আগে আমি জনিকে তোমার মধ্যে খুজতাম কিন্তু এখন আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু আমি জনির কথা তোমাকে বলতে চাই না। কেন চাই না তাও বুঝছিনা এক অজানা ভয় কাজ করে। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল রথি।

ঘরে নক করার শব্দ শোনা যাচ্ছে। রথির মা নক করছে।
কিছূক্ক্ষণ পরে  ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে।
জিসানের মা বলে, ফ্রেস হয়ে নিচে আস কথা আছে।

রথি নিচে এসে অবাক হয়ে গেল্ জিসান বাদে সবাই উপস্থিত। জিসানের মা তার পাশে রথিকে বসাল। রথি কিছুটা আচ করতে পারল। বসিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
মা আমি এখন যা বলব, তার উত্তর তুমি নিজে থেকে দিবা। মা আমরা সবাই চাচ্ছি তোমার বাকি সেমিস্টার গুলো তুমি আমেরিকায় কর।
রথি কোন উত্তর দেয় না।
শিলা তার আপাকে বলে, আপা তুমি সরাসরি বল।

কিছূ একটা ভেবে জিসানের আম্মু বল্ল, আচ্ছা মা জিসানকে তোমার কেমন লাগে।
রথি এবার আস্তে আস্তে ঠান্ডা মাথায়  বরা শুরু করল, খালাম্মা আমি বুঝেছি আপনি কি বলছেন? আমি একটু বেশি বুঝি তো। জিসান ভাইয়াকে আমার অনেক ভাল লাগে। মনে হয় জিসান ভাইয়ার আমার ভাল লাগেনা। সে সসময় আমার কাছ থেকে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে। আর তার সব কিছুই আমার ভাল লাগে।

রায়হান সাহেব রথির বাবা এবার হেসে দিলেন.. বল্লেন.. এ তো দেখি আমার মেয়ে বড় হয়েছে। আমাদের নজরেই আসেনি।
এই কথার দিকে কেও তেমন নজর দিলনা। জিসানের আম্মু রথিকে বলে, মা আমার ছেলে সবসময় ঘরকুনো। সে সময়ের কাজ সময় করেনা। আমার মনে হয় সে তোমাকে কিছু বলতে পারছে না। হয়ত বলবে।  আমি তোমার মত জানতে চাই তুমি কি রাজি।

আমি রাজি কিন্তু এখন আমি এখন আমেরিকা যাব না। আমি আমার পড়াশোনা এখানে শেষ করব। তারপর যাব। আমার মনে হয় আপনি বুঝছেন আমি আমার বন্ধুদের মিস করতে চাই না। আর দেড় বছর। এতটুকু অপেক্ষা করতে হবে। আমি আর কিছু বলতে চাই না।

কিছুক্ষণ সবাই চুপ তারপর জিসানের মা বলে, ঠিক আছে মা তোমার কথাই থাকবে। ব্যপারটা জিসানকে বুঝিও। ও এখানে আছে শুধু তোমার জন্য। আমি ভেবেছিলাম ও কিছু করবে কিন্তু না.....  কিন্তু মা ওর দেশ তো বাংলাদেশ না। ওকে ফিরতে হবে। আমাকেও ফিরতে হবে।

রথি তার বাবার আহলাদি মেয়ে তার সাথে আর কেও এ বিষয়ে বল্ল না।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধা আসছে। এই সময় জিসান ছাদে রথির জানা তাই রথি ছাদে গেল। জিসান গোলাপ ফুলের  দিকে তাকিয়ে যেন কি ভাবছিল এই সময় রথি জিজ্ঞেস করল, কি ভাবছ?
এইতো এই দেশের মানুষের নিয়ে ভাবছি। কত কষ্ট করে এই দেশের মানুষ... .... ....

এই কথা শুনে রথি হ হ করে হেসে দিয়েছে। জিসান বুঝে উঠতে পারছিল না এই হাসির উৎস কি? তাই সে জিজ্ঞেস করল,  কি হল হাসছ কেন?

হাসতে হাসতে- হাসবনা 

রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০১০

কিছু দিন আগে -১

রথিকে এই কয়দিন কেন জানি খুব মনমরা দেখায়। আবার মাঝে মাঝে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করলেও মুখে সেই আগের মত উচ্ছলতা নেই। এই জিনিসটা নিয়ে অনেক্ষণ চিন্তা করছে জিসান। কেও ব্যপারটি ধরতে পারছেনা। জিসান আন্টির কাছে শুনেছে পাচ দিন আগে আরও অবস্থা খারাপ ছিল, সারাদিন মনমরা হয়ে থাকত। কেওকে কিছু বলছিল না। চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পড়ত। জিসান এ নিয়ে খুব চিন্তা করছে।


জিসান তার অগোছালো খাটের উপর শুয়ে দেয়ালে টাঙ্গানো ঘরির দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবছিল। হঠাৎ দরজায় নক্ করার শব্দ পেল।
" ভাইয়া আসতে পারি। "
জিসান গলা শুনেই বুঝতে পারল রথি এসেছে। জিসান দরজা খুলে দিল। ঘরে ঢুকে রথি জিসানকে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া আসতে পারি।
এটা আবার জজ্ঞেস করতে হবে নাকি। এসে বস।
রথি ঘরে ঢুকে জিসানের পড়ার টেবিলের সাথে থাকা চেয়ার খাটের কাছে টেনে বসে বলল,
ভাইয়া এখনো নিজেকে না গুছালে কেমন করে হবে। তোমার টেবিল দেখ যত্রতত্র বইখাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছ। খাটের অবস্থা নাইবা বল্লাম। এর মধ্যে শুয়ে থাকতে পার কেমন করে? এমন করলে কেমন করে হব বল। এখনও কি নিজের দায়িত্ব নিবেনা।
জিসান একটু রেগে বল্ল,
ওই ছড়ি, নিজের চর্কায় তেল দেও নিজের ঘরের অবস্থা দেখেছ। আমাকে আবার বলতে এসেছ।
না ভাইয়া, আমি তো তাও আম্মুর সাহায্য করি আপনি খালাম্মার কোন কাজেই আসেননা।
আরে আমি এসব করলে আমার বউ কি করবে।
ভাইয়া বউ যদি আমার মত হয়, তাহলে তো হয়েছে। এই বলে সাথে সাথে সে হেসে দিল। ছোট বাচ্চাদের মত হাসছে।

জিসান কিছুক্ষনের জন্য থ হয়ে গেল।  কি বলবে বুঝে পাচ্ছিল না। জিসানকে চুপ থাকতে দেখে রথি জিজ্ঞেস করল,
কি হল ভাইয়া কথা বলছনা কেন?
না কিছূনা। ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি।
হাসি মাখা মুখ নিয়ে রথি বলে, কি ভাবছ?
আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার হাসিটা কৃত্রিম। তুমি জোর করে হাসছ।
এমনটা কেন মনে হচ্ছে?
খালাম্মা বল্ল তুমি নাকি কয়েকদিন ধরে খুব আপসেট।
দেখ ভাইয়া আমাকে এমন কোন প্রশ্ন করবিনা যাতে মেজাজ বিগরে যায়।
আশ্চর্যতো এখানে মেজাজ বিগড়ানোর কি আছে। কিছু কি হয়েছে? কারও কাছ থেকে দু:খ পেয়েছ?
ভাইয়া আমার একটু মনটা খারাপ ছিল এখনোও আছে মনে হয়।  যতক্ষণ না আমি নিজে থেকে  কিছু বলব ততক্ষণ তুমি আমাকে এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবিনা। আমি আরেকটু ভাবছি বিষয়টা তোমাকে বলে লাভ হবে কিনা।

না থাক বলা লাগবেনা। আমি অনেক কিছুই বুঝিনা। বুঝই তো আমি একটু বোকা।  আমাকে বলে লাভ হবেনা।
আচ্ছা ভাইয়া তুমি....  ... ...
বরং আমরা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলি। এবারের কক্স বাজারের টুরে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। প্রিতমকে তো চিন। তার গার্লফ্রেন্ড দেখি অন্যের হাত ধরে পানিতে নামছে।  তারপর যে দৃশ্য ইস দেখলে ঘেণ্ণা করে। পরের তা আর বল্লাম না।

আমি বুঝে নিলাম ভাইয়া এরপরে..
আর বলোনা.. রুবিনা তো হাতেনাতে ধরা। প্রিতম কি করবে বুঝে পাচ্ছে না, তার মাথা কাজ করছেনা। সেই মুহুর্তে আমরা মানা করা সত্বেও সে দৌড়ে  তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, এই ছেলেটা কে? আমরা পিছনে পিছনে ছুটছি? রুবিনা কি বলবে বুঝে পাচ্ছিল না। আমরা পৌছানোর আগে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিল।

ঠিকই করেছে।
আহা বলনা কি যে পরিস্হিতি সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ জড় হওয়া শুরু করল। ওই ছেলেটিও রুবিনাকে জিজ্ঞাসা করছে প্রিতমের ব্যপারে। রুবিনা কাদছে কোন উত্তর দিচ্ছেনা।  প্রিতম বল্ল, এর গলায় যে ডায়ামন্ডের হারটা সেটা আমার দেওয়া। ছেলেটা প্রিতমকে বলে, ইম্পসিবল এত টাকার গিফ্ট আপনি দিতে পারেননা, ওর মামা দিয়েছে। আপনি যে মেয়ের গায়ে হাত তুলেছেন এটার পরিণতি কি হতে পারে আপনি জানেন। প্রিতম বলে, ওর মামা- হা ওর একটাই বেকার মামা কি দিবে। ছেলটো বলে, আপনি কারও ব্যপারে এমন করে বলতে পারেননা। প্রিতম বলে,  আমিন মামা ওরে আগে রূপার গলারটা দিক.. ডায়ডমন্ড অনেক দূরের কথা। এবার ছেলেটা বুঝল রুবিনার মামার নাম এই ছেলেটার জানার কথা না। ছেলেটা এবার রুবিনাকে বল্ল, shame on you.. তুমি আমার সাথে নাইট পাস করতে চাও। তুমি আবার.... ছিহ। বলতে বলতে থেমে গেল।  তুমি একটা নোংরা মেয়ে।

অনেক্ষন একটানা শুনার পর জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা অনেক ভদ্র তাই না।
হুম।
এ ধরণের মেয়েদের উচিত শিক্ষা হওয়া উচিৎ। এরাই ভালো ভালো ছেলেদেরকে ভাঙ্গিয়ে খায়।
হুম। প্রিতমেরও তো মাথা খারাপ..  ৪০হাজার টাকার অরনামেস্টস দিতে বলে কে। ওরও বোঝা উচিৎ।

হুম ভাইয়া, প্রিতম ভাই এত টাকা কই থেকে পেল?
সব গ্রামীনের আইপিওর কল্যাণ।
আসলেই যা হয়েছে ভালই হয়েছে। আরও দেরি হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত।
হুম ভালই হয়েছে। আল্লাহ যা করে ভালর জন্য করে।
আচ্ছা ভাইয়া যারা সত্যিকারের ভালবাসে তারা কেন তাদের সত্যিকার ভালবাসা পায় না।
আমি জানিনা। আমি আমেরিকান, বুঝিনা ভালবাসার ভাষা।
না ভাইয়া, তুমি মিথ্যে বলছ, যে আমেরিকানের মুখে এত সুন্দর বাংলা বলে সে অবশ্যই ভালবাসার মানে বুঝে। বাংলা হল মধুর ভাষা। এই ভাষায় শুধু সুন্দর করে এই বাক্যটি বলা যায়।  আমি তোমায় ভালবাসি। বলতে বলতে রথি চোখের কোণে অশ্রু ফোটা।

রথি বলার সময় জিসান ভাবছিল, তুমি জাননা, আমি কেন পাচটা মাস বাংলাদেশে আছি। তুমি বুঝনা কেন আমার বাংলা এত শুদ্ধ? আমি বলতে পারছিনা, আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু রথির চোখে পানি দেখে আবার বল্ল,
এই রথি আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবনা। অনেক প্রশ্ন মনে আছে কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে পারছিনা।
আচ্ছা ভাইয়া তুমি সবসময় আমার কথা শুন কেন?
আমার কাছে মনে হয় এর উত্তর নেই।
না ভাইয়া আমি দেখেছি তুমি সবসময় হিন্দি ছবির মত, নায়ক যেমন সবসময়ই নায়িকার কথায় উঠবস করে তুমিও তাই কর। ব্যপারটা কি বল তো।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিসান বলে হিন্দি ছবি তো জীবন থেকে আসে আবার ছবির সাথে জীবন মিলিয়ে লাভ নাই।
তার মানে... থাক আর সামনে না বলাই ভাল।
হুম থাক.. না বল। বেশি পাকনারা খুব তারাতারি বুঝে যায়।
থাক ভাইয়া বুঝেছি, তোমার মন তোমার কাছে নাই।
অবাক হয়ে গেল জিসান। কি বলবে বুঝে পাচ্ছেনা।


চলবে....

সন্ধান করতে