সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০১০

কিছু দিন আগে -২

রথি বলা শুরু করল আচ্ছা ভাইয়া যে মানুষগুলো সত্যিকারে ভালবাসে তারা কেন তাদের ভালবাসা পায়না?
আমি তো জানিনা। (মনের মধ্যে গভীর ব্যথা লুকিয়ে কথাটি বল্ল।)
আচ্ছা তুমি কি সত্যি বুঝনা। নাকি অভিনয় কর। আচ্ছা ভাইয়া প্রতিটি মানুষ কি অভিনয় করে। এই যে মানুষ যে মানুষকে বলে, ভালবাসি। তাকে ছাড়া বাচতে পারব না। তুমি  আমার ঘুম তোমায় ছাড়া আমি বাচবনা। তারপপর ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কোন রকম ফল্ট পেলে না আমি তোমাকে কথননো ভালবাসিনি। এই যেমন প্রিতম ভাইয়া এক ধাক্কায় রুবিনাকে পথে ছেড়ে দিল দুজনই। এটা তো অনেক বড় কারণ ছিল। এর চেয়েও ছোট ছোট কারণেও প্রেমিক প্রমিকাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু রুবিনা  অনেক কূল খুজতে যেয়ে কোন কূলই খুজে পেল না।......

আমি জানিনা মেয়েটার মধ্যে হয়তোবা কোন প্রব্লেম আছে। কিন্তু আমার বন্ধুর মাথায় ছিট আছে। মেয়েটার সাথে এখনো তার রিলেশন আছে। এই দেশের ছেলে মেয়েরা পাগল্ কিন্তু আমেরিকায় মানুষদের এত সময় নাই তারা কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত।
রথি অবাক হয়ে গেছিল। তার কান বিশ্বাস করতে পারছিল না। হচকচিয়ে জিজ্ঞেস করল এমন মেয়ের সাথে প্রেম। বল কি। মেয়েটা তো চরিত্রহীন।
হুম আমিও বুঝিনা আমেরিকা হলে একটা কথা ছিল্। এটা আমেরিকান কুয়ালিটি।  এখানকার মানুষরা যে এমন...  ভাবতে ভাল লাগে। ডিজিটাল হয়েছে বাংলাদেশ।
না ভাইয়া আবার ব্রেকআপ হবে। এমনটি হয়না। এখানে কোন ব্যপার আছে।
হতে পারে। প্রিতম বলেছে তার পিছনে এত টাকা নষ্ট করেছে কিছু তো উঠিয়ে আনতে হবে।

ছি: ভাইয়া তাহলে তো সর্বনাশ হয়েছে। তুমি কোন দেশের এলিয়েন্ বুঝনা কি হচ্ছে। আমোরকান এমন বোকা হয় প্রথমবার দেখছি।
না আমি এভাবে ভেবে দেখিনি। সবসময় পসিটিভ ভাবি তো তাই।
ভাইয়া এ পৃথিবীতে সব কিছু পসিটিভ নেয়া যায়না। কোন কিছু পসিটিভ নেয়া যায় না।
এখন কি করব।
কি আর করবে তোমার কিছুই করার নাই তুমি নিজেই এদেশে মেহমান। এরা সব তোমার ছোটবেলার বন্ধু বাচ্ছ ভাইয়া বাচ্ছ তা না হলে আজও তুমিও এদের মধ্যে হতে।
হলে হতাম তো কি হত। যেমন দেশ তেমন মানুষ।
দেশের দোষ দিবা না।
না না তুমি প্রতিদিন যা চাচ্ছ তাই পাচ্ছ। বন্ধুদের সাথে মন খুলে টাকা খরচ করছ। পেজিরোতে চড়। মানুষের কাছে গি দেখেছো। তোমার মুখে এ সাজায় না।

তা অবশ্য ঠিক। আমি বুঝিনি কখনো কিন্তু আমি কখনো প্রিতম ভাইয়ার মত তোমাকে কল্পনা করবনা কারণ.... ...
কারণ কি?
তুমি কিচ্ছু বুঝনা।
কি বুঝিনা।
একটা মেয়ের চোখের ভাষা, মনের  অবস্থা।
তুমি মনে হয় খুব বুঝ মনে হয়।
আমি বুঝি সব বুঝি তোমার কথা তুমি মুখে আটকিয়ে রাখ আ মনকে কষ্ট দাও।
আমি কিছু বুঝছিনা।
ভাইয়া যতই আধুনিক হইনা কেন আমি কেন বাঙ্গালি একটা মেয়ে। হতে পারে আমি অগোছালো এবং টাকা পয়সার প্রতি আমার কোন মায়া নেই। কিন্তু....

আমি বুঝেছি। তুমি কি কেওকে ভালবাস?
এমন একটা প্রশ্নের জন্য রথি প্রস্তুত ছিলনা। সে অনেক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভেবে বল্ল, ভাইয়া এই কথার উত্তর আমি দিবনা।

না দিলে তো আমি আমার  মনের কথা তোমার মনের সামনে উপস্থাপন করতে পারছিনা।
ঠিক এই সময় জিসানের মা ঘরে ঢুকে বল্ল মা শিলা(রথির মা) তোমাকে খুজছে।
রথি, জিসানকে  বল্ল, ভাইয়া আজ যাই তাহলে পরে কথা হবে। 
আমার কথার উত্তরটা পারলে দিও।


রথি নিজের ঘরে চলে গেল। একই বিল্ডিং এর তিন তালায় রথি থাকে। বিল্ডিং টা রথিদের। চারতালায় একটা ফ্লাট দিয়েছে রথির বাবা, জিসান আর তার মাকে। তিন মাস থাকার কথা ছিল এখন প্রায় ছয় মাস হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকায় থাকে। চলে যাওয়ার সময় হয়ে আসছে। জিসানের মা বুঝতে পেরেছে। তিন মাস ছয় মাস তো আর এমনি এমনি হয়না । তাদের আরো আগে বোঝা উচিৎ ছিল।  জিসানের মা তার ছোট বোন শিলাকে  ব্যপারটা বলেছে। রথির বাবার কোন আপত্তি নেই নিজেদের মধ্যে আত্মীয় করতে। তাদের এ বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল।




রথি নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে খাটে শুয়ে  কাঁদছে। তারপর মনে মনে বলতে থাকে, ভাইয়া তুমি জাননা আমি কেন আমার চোখে জল। তুমি আসার কিছুদিন আগেও সে আমার হয়েছিল। আমার মন জয় করেছিল।  আমি তো মরেই গেছিলাম তুমিই আমাকে আবার জীবিত করেছ। তুমি জাননা জনিকে আমি কত ভালবাসতাম। কিন্তু সে আমার কথা রাখেনি। আমার সাথে প্রতারনা করছে।  সে আমায় ছেড়ে গেল। মাত্র ২১দিন । সেই একুশ দিন আমি ভুলতে পারতামনা যদি না তুমি আসতে। আমি কখনোও তোমাকে বলতে পারব না জনি আমায় ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আমি তার কখনো খারাপ চাইনি সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল কেন? আমি তো তা চাইনি। ভাইয়া জাননা কত অভিনয় করেছি। বাসায় কেওকে জানাবোনা বলে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছি। আমার আব্বুর হাসিখুশি মেয়ে হয়ে থাকতাম। প্রথমে মনে করে ছিলাম, তুমি আমার কাছে থাকা মানে জনি আমার কাছে থাকা।  কিন্তু না জনি আর তোমার মধ্যে কোন মিল নাই। আগে আমি জনিকে তোমার মধ্যে খুজতাম কিন্তু এখন আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু আমি জনির কথা তোমাকে বলতে চাই না। কেন চাই না তাও বুঝছিনা এক অজানা ভয় কাজ করে। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল রথি।

ঘরে নক করার শব্দ শোনা যাচ্ছে। রথির মা নক করছে।
কিছূক্ক্ষণ পরে  ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে।
জিসানের মা বলে, ফ্রেস হয়ে নিচে আস কথা আছে।

রথি নিচে এসে অবাক হয়ে গেল্ জিসান বাদে সবাই উপস্থিত। জিসানের মা তার পাশে রথিকে বসাল। রথি কিছুটা আচ করতে পারল। বসিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
মা আমি এখন যা বলব, তার উত্তর তুমি নিজে থেকে দিবা। মা আমরা সবাই চাচ্ছি তোমার বাকি সেমিস্টার গুলো তুমি আমেরিকায় কর।
রথি কোন উত্তর দেয় না।
শিলা তার আপাকে বলে, আপা তুমি সরাসরি বল।

কিছূ একটা ভেবে জিসানের আম্মু বল্ল, আচ্ছা মা জিসানকে তোমার কেমন লাগে।
রথি এবার আস্তে আস্তে ঠান্ডা মাথায়  বরা শুরু করল, খালাম্মা আমি বুঝেছি আপনি কি বলছেন? আমি একটু বেশি বুঝি তো। জিসান ভাইয়াকে আমার অনেক ভাল লাগে। মনে হয় জিসান ভাইয়ার আমার ভাল লাগেনা। সে সসময় আমার কাছ থেকে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে। আর তার সব কিছুই আমার ভাল লাগে।

রায়হান সাহেব রথির বাবা এবার হেসে দিলেন.. বল্লেন.. এ তো দেখি আমার মেয়ে বড় হয়েছে। আমাদের নজরেই আসেনি।
এই কথার দিকে কেও তেমন নজর দিলনা। জিসানের আম্মু রথিকে বলে, মা আমার ছেলে সবসময় ঘরকুনো। সে সময়ের কাজ সময় করেনা। আমার মনে হয় সে তোমাকে কিছু বলতে পারছে না। হয়ত বলবে।  আমি তোমার মত জানতে চাই তুমি কি রাজি।

আমি রাজি কিন্তু এখন আমি এখন আমেরিকা যাব না। আমি আমার পড়াশোনা এখানে শেষ করব। তারপর যাব। আমার মনে হয় আপনি বুঝছেন আমি আমার বন্ধুদের মিস করতে চাই না। আর দেড় বছর। এতটুকু অপেক্ষা করতে হবে। আমি আর কিছু বলতে চাই না।

কিছুক্ষণ সবাই চুপ তারপর জিসানের মা বলে, ঠিক আছে মা তোমার কথাই থাকবে। ব্যপারটা জিসানকে বুঝিও। ও এখানে আছে শুধু তোমার জন্য। আমি ভেবেছিলাম ও কিছু করবে কিন্তু না.....  কিন্তু মা ওর দেশ তো বাংলাদেশ না। ওকে ফিরতে হবে। আমাকেও ফিরতে হবে।

রথি তার বাবার আহলাদি মেয়ে তার সাথে আর কেও এ বিষয়ে বল্ল না।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধা আসছে। এই সময় জিসান ছাদে রথির জানা তাই রথি ছাদে গেল। জিসান গোলাপ ফুলের  দিকে তাকিয়ে যেন কি ভাবছিল এই সময় রথি জিজ্ঞেস করল, কি ভাবছ?
এইতো এই দেশের মানুষের নিয়ে ভাবছি। কত কষ্ট করে এই দেশের মানুষ... .... ....

এই কথা শুনে রথি হ হ করে হেসে দিয়েছে। জিসান বুঝে উঠতে পারছিল না এই হাসির উৎস কি? তাই সে জিজ্ঞেস করল,  কি হল হাসছ কেন?

হাসতে হাসতে- হাসবনা 

সন্ধান করতে