শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

শেষ বেদনা-একটি প্রেম কাহিনীর ইতিহাস

চেকআপের জন্য নিউইয়োর্ক যাচ্ছি। অভ্রকে অনেক মনে পড়ছে। তাই মনটা ভাল নেই। প্রায় বত্রিশ বছর হয়ে গেছে। মনে হয় আর কখনোই তার সাথে দেখা হবেনা। অাজ অামি অভ্র থেকে ওনেক দূরে। ও যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক। আমি এখন আমস্টেরর্ডাম ইয়ারপোর্টে। প্লেন তিন ঘন্টার জন্য ডিলেয়। আমার পাশের সিটে যে বসে আছে তাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। তার আচরণ গুলো দেখে মনে হচ্ছে, একলা একলা তার ভালো লাগছেনা। আচরণ গুলো অনেকক্ষাণী অভ্র এর মত। ওর চেহারাটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। অভ্রই মনে হচ্ছে। ওর এই বিশেষভাবে কাগজ ছেড়া আমি কখনই ভুলবনা। আগেও যখন ও আমার সাথে রাগ করত এভাবেই কাগজ ছিড়ত আসলেই কি ও অভ্র। হয়ে থাকলে আল্লাহ তোমাকে হাজার শুকরিয়া। জানি, অভ্র আমাকে মনে রাখবেনা। হয়তবা বিয়েও করেছে। অভ্র আমার মত নাকি। কথা বলে দেখি। আমি বলি,আমি কি আপনার সাখে কথা বলতে পারি।

অনেক্ষন পরে উত্তর দিল। আমি আমার পরিচয় দিলাম। কি ভেবে মিথ্যে নাম বল্লাম বুঝলাম নাঅভ্র তার নাম বল্ল। আমি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। কারণ শেষ বারের জন্য হলেও আমি আমার প্রিয়ের সাথে দেখা করতে পেরেছি। অভ্রর অনেক কথাই আমার কানে যাচ্ছেনা। আমি এমন ভাব করছি যেন আমি ওর সব কথাই শুনছি। বাহিরে প্রকাশ করছি না যে, আমি কত খুশি। হঠাৎ থমকে গেলাম । অভ্র ছেলের বাড়ি যাচ্ছে, অনেকদিন তার নাতিপুতনিদের সাথে নাকি দেখা করেনি। এ কথা শুনে মনটা কেমন জানি শুন্য হয়ে গেল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বিবাহিত

এই প্রশ্ন শুনে একটু অবাক হল। আমি বলি,

আমাকে চিনলে না। আমি তোমাকে ঠিকই চিনেছি, সবসময় চিনব।

বুঝলামনা।

অভ্র অনেক কিছু বলছে, বেশির ভাগই বুঝতে পারছিনা। আমার হুশ নেই। আমার কথা মনে আসছেনা। তখন আমি ওকে মনে করানোর জন্য বলি,

মনে আছে ত্রিশ বছর আগে একটি মেয়েকে ক্যাট্সঅাই দোকানে চিনেও না চিনার ভান করেছিলে কারণ তোমার সাথে এক বন্ধু ছিল। সেই মেয়েটিকে তুমি ভালবাসতে। আমিই সেই মেয়ে।

অভ্র বলে,প্রেম করেছি অনেক কিন্তু ভালোবেসেছি একজনকে আর তাকেই জীবনসঙ্গী করেছি তবে দু:খের বিষয় সে এখন আমার সাথে নেই।

আমি নিস্তব্ধ ভাবছি মনে মনে, এ কি বলছ! কত প্রেম করেছো। এমন একটি লোকের উপর বিশ্বাস করে তার প্রতিক্ষায় সারা জীবন কাটালাম। কখনো ভাবিনি এই লোকটি এমন করবে। তাহলে কি মিথ্যা ছিল তার সব কথা। তারপরেও কেন জানি কষ্ট লাগছে শুনে, অভ্রর জীবনসঙ্গী মারা গেছে। হে মাবুদ, কেন ওর সাথে এমন হল তুমি ওই কষ্টটুকু আমাকে দিয়ে দিতে। আমি বলি,

আমি দু:খিত, তোমার হয়তবা মনে নেই। তুমিই বলেছিলে আমাকে ছাড়া আর কেওকে ভালোবাসবেনা। আমাকে না পেলে আর কেওকে বিয়ে করবেনা। আমি যেমনই হই দেখতে তোমার আপত্তি নেই....

ও বলে, ওয়েইট মোবাইলে রং নাম্বারে প্রমেটা শুরু হয়। কারণ এমন পাগলামি আমি মোবাইলে এক মেয়ের সাথে বলেছিলাম। কিন্তু তার নাম বৈ দিয়ে শুরু হয়না।

ইলোরা আমার নাম।

ও আচ্ছা তুমি সেই- আমি দু:খিত, তোমাকে অনেক দূ:খ দিয়েছি। তবে ইচ্ছে করে দেইনি। তখন আমরা এত কিছু বুঝতাম না। আসলে সেটা বয়সের দোষ ছিল। তুমি ক্যাট্সআই এর কথা বল্লে কেন, এর পরেও তো এক রেস্টরায় এ তোমার সাথে দেখা হয়। -অভ্র বলে

তাহলে তুমি আমাকে চিনলে।

কতদিন পর দেখা হল, পৃথিবী কত ছোট। এভাবে আমাদের অাবার ভিন দেশে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি....।

আবল তাবল কি বলছে। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না আমার মাথায় এখন একটাই প্রশ্ন ও আমার সাথে এমন করল কেন। একবার মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করি একবার মনে হচ্ছে না করি। আমি বলি,

বত্রিশ বছর পর দেখা হল।

এরপরের প্রশ্নটা স্পষ্ট শুনলাম। প্রশ্নটা শুনে মনে মনে হাসছি, আমার ছেলেমেয়ে কয়েটা আমার বর কই...

তোমাকে নিয়ে লেখা সব গান, কবিতা আমি এখনো গুছিয়ে রেখেছি। তোমার প্রতিটি কথা আমার মনে আছে।-অামি বলি।

কি পাগলামিটা তখন করেছি। এখন তুমি একজনের ঘরের বউ, আমার এক ছেলে এক মেয়ে।

এটাকে যদি তুমি পাগলামি বল তাহলে আমি পাগলামি করেছি। কারণ আমি এখনো বিয়ে করিনি।

অভ্র বিশ্রি ভাবে হাসছে। শুনতে ভাল লাগছেনা। কিছুই করতে পারছিনা কারণ ওর উপর আমার কোন অধিকার নেই। অভ্র হাসতে হাসতে বলে ওর সাথে শেষ দেখাতে নাকি বলেছিলাম- আমি বিবাহিত।

আমি বলি,

মিথ্যে বলেছিলাম, জানাতে চাচ্ছিলাম- ভালো আছি তোমাকে ছাড়া। একটু কষ্ট দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তুমি কষ্ট পেলেনা।

হাসিটা থামিয়ে অভ্র বলে- কারণ তখন আমার পাশে অন্য কেও ছিল। তাই তোমাকে ভুলতে বাধ্য হয়েছিলাম।

আমি অনেক কষ্ট পেলাম ওর এই কথা শুনে। প্রকাশ করতে পারছিনা। এই সব কথা শুনার আগে আমি মরে গেলাম না কেন? হোক না আমি পাগল, হোক না এটা একতরফা ভালোবাসা তাও আমি অভ্রকে ভালোবাসি। সামনে বসা এই লোকটি অভ্র না তারপরও তার কাছে বারে বারে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে, কেন সে আমার সাথে এমন করল। আমি বলি,

কি সুন্দর করে তুমি এই কথাগুলো বলছ। ইচ্ছা ছিল যাকে ভালোবেসেছি তাকেই বিয়ে করব। কারণ সে আমাকে বলেছিল সে আমাকে ছাড়া আর কেওকে বিয়ে করবেনা। আমি ভেবেছিলাম সে সত্যি বলেছিলো। আমি তাকে অনেক ভালোবাসতাম, এখনও বাসি।

তাহলে তুমি ভুল করেছো। যখন জানলে তোমাকে ছাড়া ভালো আছি, তারপরেও এমন কেন করলে- বুঝলামনা

কারণ একেই ভালোবাসা বলে। আর বিয়ে না করেও তো আমি ভাল আছি। একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে, তুমি আমার সাথে এমন করলে কেন?

অভ্র বলে, সত্যি বলতে ওই সময় আমি দেখতে তেমন ভালো ছিলাম না, তাই আমি এত সুন্দর খোজার চেষ্টা করিনি। আমি সাধারণ একটা মেয়ে খুজছিলাম জীবনসঙ্গি হিসেবে। আমি তোমার সাথে মোবাইলে কথা বলে প্রপোজ করেছিলাম, এটা আমার প্রথম ভুল ছিল। আর দ্বিতীয় ভুল ছিল তোমাকে না দেখেই ছয় মাস প্রেমটি চালিয়ে যাই। আমি তোমাকে সাধারণ ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমার সব কল্পনায় কালির ছিটা পড়লো। তুমি মোটা, আমার চেয়েও দেখতে কালো। আজও দেখ তোমার চেয়ে আমি দেখতে কত সুন্দর। আমি তাই ওইরকমটি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। দু:.....

আমি চুপ করে সব শুনে গেলাম। এখন অনুভব করছি, এতক্ষন আমার চোখে জল ছিল না কিন্তু এখন তা উপস্থিত। সে কখন উঠে চলে গেল টের পেলাম না। আমার জীবনটা কি গল্পের কাহিনী। আমার সাথেই এমন হল। খুব ভালো বলেছো আমি দেখতে সুন্দর না তাই আমাকে আর ভালোবাসলেনা। আজ পৃথিবীর সবাইকে বলতে হচ্ছে করছে- সবই ভুল। ভালোবাসা বলে এই পৃথিবীতে কিছু নেই। আসলে আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। আমি দেখতে সুন্দর না তাই আমার ভালবাসার অধিকার নেই। আমি দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছি বিয়ে না করার ভয়ে, কার জন্যে, শুধু তোমার জন্যে অভ্র- শুধু তোমার উপরে বিশ্বাস করে, তোমাকে ঠকাবো না বলে আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। বাবা তো আমার বিয়ে দিয়েই দিচ্ছিল। পাত্র নিজে আমাকে পছন্দ করেছিল। পাত্রের সাথে কথাও হয়েছিল। মিলন বলেছিল, ভালবাসার জন্য বাহ্যিক সুন্দযর্কে প্রাধান্য দেওয়া ঠিক না। ভালবাসার বিচার মন থেকে করতে হয়। আমি তাকে বলেছিলাম- আমাকে ক্ষমা করুন। মিলন আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার মত মানুষ এই পৃথিবীতে আছে বলে এখনোও ভালোবাসা আছে। আমি কখনোও ভাবিনি অভ্র এমন করবে। যা করেছে ভালো করেছো। আমাকে পেলেও তার কি লাভ ছিল। আমি আর কিছুদিনের মেহমান এই পৃথিবীতে। তুমি জানোনা যে আমি হৃদরোগে ভুগছি। আমি বুঝিনা এতকিছু হওয়ার পরও কেন আমার বলতে ইচ্ছে করছে, অভ্র আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবেসে যেতে চাই। তুমি সবসময় ভাল থাক এই আমার প্রার্থনা আল্লাহর কাছে। হঠাৎ জানি আমার কি হল। আমার চারিপাশে অনেক মানুষ। চারিদিকে অন্ধকার দেখছি। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে...

সন্ধান করতে