শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

নূপুরের চোখের জল আর আরিফের ভাগ্য ২


২. আরিফের জীবনের ওলটপালট

এখন আরিফ তিনটা টিউসুনি করে। নাটাশা তাকে ফ্লেক্সি পাঠাত, আরিফের কাছে ভাল লাগেনা। নাটাশার সাথ কথা বলে জানতে পারল, নাটাশা অনেক বড় লোকের মেয়ে। নাটাশার মা নেই। ওর যত্ন করার জন্য অনেক মানুষ আছে। এক খালা লন্ডন থাকে। নাটাশা তাকে পছন্দ করে কিন্তু পড়শোনার জন্য খালাকে লন্ডন যেতে হয়। বাবা তেমন সময় দিতে পারে না।  আরিফের সাথে কথা বলতে তার ভাল লাগে। আরিফকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা। মাদক কেন্দ্রময় থেকে সুস্থ্ হয়ে ফিরে এসেছে। নাফিসা যখন যা চায় তাই পায়। নিজের ইচ্ছা মত চলে।
নটরডেমের পড়াশোনার চাপ। প্রাইভেট পড়তে যাওয়া, প্রাইভেট পড়ানোর পর হোস্সেলে ফিরতে ফিরতে ১১টা বেজে যায়। তারপর আবার রাত জেগে নাটাশার সাথে কথা বলা আর একসাখে পড়াশোনা করা, ২-৩ঘন্টা ঘুমানো। এই ছিল আরিফের পতিদিনের পুঞ্জিকা ছিল।

প্রথম ঈদ। নাটাশার কথা ভুলেই গেছে। এবার তার নূপুরের কথা মনে পড়ল। নূপুরের জন্যই তারাতারি বাড়ি ফিরা। নাটাশার সাথে কথা বলবেনা, আর বাসায় এর জন্য সমস্যা হবে তাই সেলেফান বন্ধ রাখে। বাড়ী ফিরে মার সেকি কন্না,-আমার নাদুস নুদুস ছেলের একি অবস্থা।
বাড়ী ফিরে নূপুরের জন্য অপেক্ষা করল। আরিফ মনে করেছিল, ওর আসার কথা শুনে নূপুর ঠিকই দেখা করতে আসবে। কিন্তু না আসায় আরিফ তার মাকে ওর ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর পায় না। পাড়ার মানুষ থেকে জানতে পারল, নূপুরের বাবা বিয়ে ঠিক করেছিল। নূপুর বিয়ে করবেনা তাই বাসা থেকে পালিয়েছিল। ধরা পড়ার পরে তার বাবা তাকে ছোট বোনের বাড়ি টাঙ্গাইল পাঠিয়ে দিয়েছে সেখানই সে এখন থাকে, পড়াশোনা করে। বাবা মেয়ের মুখ দেখবে না নূপুরের মা গেছে টাঙ্গাইলে। এই কথা  শুনে আরিফের মন খারাপ হয়ে গেছে। তার ঈদ আধা হয়ে গেছে।

ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরে দেখে মোবাইল হাঙ হয়ে আছে। নাটাশার অসংখ্য এস.এম.এস আর মিসকল মোবাইলের এই অবস্থা। কোন মেসেজ.. মিস কল সংখ্যা দেখতে পারেনাই। দোকানে যেয়ে মোবাইল ঠিক করালো। তারপর রাতে নাটাশাকে ফোন দেয়ার পর জানতে পারল, নাটাশা এই কয়দিনে কোন ওষুধ খায়নি বরং ড্রাগ নিয়েছে। কানতে কানতে এই সব কথা নাতাশা বলে। আরিফ সরি বলে আর নাটাশা যাই চাবে তাই করবে এমন কথা দেয়। নাটাশা পরের দিন দেখা করতে চায়। সারাদিন ওর সাথে সময় কাটাবে। আরিফ দেখা করতে চাচ্ছিলনা- কথনই না। কিন্তু নিজের অনিচ্ছায় তাকে দেখা করতে হল। 


চলবে......  

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

নূপুরের চোখের জল আর আরিফের ভাগ্য


১. সূচনা
নারায়ানগঞ্জে যৌথ পরিবার দুই ভাই একসাথে থাকত। ছোট ভাই কাউসার আহমেদ এর দুই ছেলে মেয়ে আর বড় ভাই আহসান হাবিব এর তিন ছেলে মেয়ে।কাউসার আহমেদের বড় ছেলে আরিফ  আর আহসান হাবিবের মেঝ মেয়ে নূপুর পিঠে পিঠে মানুষ হয়েছে। নূপুর ছিল ঠান্ডা প্রকৃতির আর আরিফ ছিল দুষ্টু। সারা দিন এই দুজন ঘরটা গরম করে রাখত। নূপুরের নালিশ এর জালায় নূপুরের মা আর আরিফের মার মধ্যে প্রায় ঝগড়া লাগত। এমনি দুজনের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি ভাল। বাবারা এসব নিয়ে মাথা ঘামাতো না। দুজনের মা না পেরে দুজনকেই ঘরে আটকিয়ে রাখত দরজা বন্ধ করে। তখন আরিফ তার মাকে বলত-
মা আমি আর নুপূরকে জ্বালাতন করবনা। ওইদিকে নূপুর তার মাকে বলত-
মা আমি আর তোমাকে নালিশ করবনা।
দুজনের কান্নাকাটি দেখে মায়ের মায়া লাগে তাই আবার দুজনকে ছেড়ে দেয়। সবসময় এমনই করত দুজনই।


আস্তে আস্তে তারা বড় হতে লাগল । বাবারা একই সাথে ব্যবসা করত। কিন্তু যখন আরিফ নূপুর ৭ম শ্রেণীতে পড়ে তখন ব্যবসার মধ্যে ভুল বোঝাবোঝির জন্য ফাটল ধরে। তখন থেকে দুই ভাই আলাদা হয়ে যায়। ব্যবসা আলাদা হয় বাড়ীর মাঝে পড়ে ইটের দেয়াল। তবে দেয়ালের মাঝে একটা ছোটখাট একটা টিনের দরজা আছে। আগে বাড়িতে একটাই ঢোকার গেট ছিল এখন দুটো গেট।  আলাদা হয়ে যায় দুই ভাই কিন্তু তাদের বউরা এবং আরিফ আর নূপুর আলাদা হয়নি। দুই ভাই সামনাসামনি দেখা হলে কেও কারো সাথে কথা কলে না।  

দশম শ্রেণীতে যখন আরিফ উঠল তখন আরিফ বুঝতে পারল তার মধ্যে একটা পরিবর্তন হচ্ছে। সে এখন সারাদিন নূপুরকে নিয়ে চিন্তা করে। নূপুরকে সে আগের মত জ্বালায় না। নূপুরের মধ্যে এই পরিবর্তন হয়নি আরিফ খেয়াল করে। মাট্রিক পরিক্ষার পর বুঝতে পারল এটা ভালবাসা ছাড়া কিছু না। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি কারণ আরিফ নুপূরের থেকে আট মাসের ছোট্ এই দিকে আরিফের বাবা ঠিক করেছে আরিফকে ঢাকায় পাঠাবে। আরিফ ঢাকায় চলে আসল। আসার সময় নূপুর কেদেছিল আর বলেছিল চিঠি লিখিস। তখন আরিফের চোখও ভিজে আসে।

আরিফকে তার বাবা মোবিইল কিনে দিয়েছিল। কিন্তু নুপূরের কাছে কোন মোবাইল নাই। ঢাকায় এসে আরিফ নটোরডেম এ চান্স পায়। এবং সাথে চান্স পায় আরিফের দুশমন রানাও পায়, ওরই সথে পড়ত। দুজনকে দুজনের বাবার জন্য একই হোস্টেলে থাকতে হত। ঢাকায় এসে নুপূরকে  পর পর তিন মাস টিনটা চিঠি লিখেছিল। তার উত্তর্‌ ও পেয়েছিল কিন্তু এর পর থেকে পরবর্তি তিনটা চিঠির উত্তর পায়না। অনেক চিন্তিত ছিল। কিন্তু কেওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলনা কি হয়েছে। এদিকে হোস্টেলের সবারই ফোনফ্রেন্ড আছে। কারো গার্লফ্রেন্ড কারো টাইমপাস ইত্যাদি ইত্যাদি। আরিফের এক বন্ধু এক মেয়ে নাটাসার নাম্বর দেয়। তার বন্ধুও জানেনা নাটাসা কেমন? আন্দাজের উপর আরিফকে বলেছে মেয়েটা ভাল। আরিফ কথা বলা শুরু করেছে নাটাসার সাথে। আর এই নাতাসাই আরিফকে নূপুর থেকে দূরে সরিয়ে নিল। আস্তে আস্তে নূপুরের প্রতি ঝোক কমে । একমাসে তিনশত টাকার হিসেব দিতে পারিনি তাই বাবার কাছে অনেক বকা খেতে হল নাটাশাকে ফোন করার কারণে।  


চলবে....

সন্ধান করতে